ইলেকট্রিক রাইস কুকারে কেক বানানোর উপায়

ইলেকট্রিক রাইস কুকারে কেক বানানোর উপায়
ইলেকট্রিক রাইস কুকারে কেক বানানোর উপায়



কেন আমি রাইস কুকারে কেক বানাতে শিখেছি

বছর দুই আগের কথা — আমার ওভেন হঠাৎ কাজ বন্ধ করলো। জন্মদিন ঠিক কাছেই, কিন্তু আমার পরিকল্পনা ভেঙে পড়লো। তখন মাকে জিজ্ঞেস করলাম, “এরকম হলে তোমার কোনো বিকল্প আছে?” মা হাসলেন: “রাইস কুকার নিয়েই কর।” আমি হাসি ফেললাম, ভেবেছিলাম কী করে হবে! 

কিন্তু সেই প্রথম ট্রাইয়ে যখন কেকটা ধীরে ধীরে ফুলে উঠলো, ঘরে সেই মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে গেল—আমার সব সন্দেহ মুছে গেল। সেই দিন থেকেই এটা আমার কাছে একটি ছোট-খাটিয়া, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী Cake Recipe হয়ে উঠেছে।


ইলেকট্রিক রাইস কুকারে কেক রেসিপির সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ

বৈশিষ্ট্যবিবরণ
রেসিপির নামরাইস কুকার কেক (Rice Cooker Cake)
প্রস্তুতি সময়১৫–২০ মিনিট
রান্নার সময়৪০–৫০ মিনিট (কুকার অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে)
পরিবেশন৬–৮ জন
জটিলতাসহজ (শিক্ষানবিশদের জন্যও উপযোগী)
Quick Tipডিম, দুধ রুম টেম্পারেচারে রাখুন — কেক ফ্লাফি হবে।

ইলেকট্রিক রাইস কুকারে কেক বানানোর উপায় সম্পূর্ণ উপকরণ

প্রধান উপকরণ

  • ১ কাপ (১২৫ গ্রাম) ময়দা (all-purpose flour)
  • ½ কাপ (১০০ গ্রাম) চিনি
  • ১ চা চামচ বেকিং পাউডার
  • ½ চা চামচ বেকিং সোডা
  • ¼ চা চামচ লবণ
  • ২ টি ডিম (রুম টেম্পারেচারে)
  • ½ কাপ (১২০ মি.লি) দুধ (রুম টেম্পারেচার)
  • ¼ কাপ তেল অথবা গলানো মাখন
  • ১ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স

ঐচ্ছিক (ফ্লেভার/টপিং)

  • ২ টেবিল চামচ কোকো পাউডার (চকলেট বাসানোতে)
  • ¼ কাপ কুচানো বাদাম বা কিসমিস
  • গলানো চকলেট / চকলেট সস / হুইপড ক্রিম (টপিংয়ের জন্য)

Tip: উপকরণগুলো আগে থেকে রুম টেম্পারেচারে রাখলে (বিশেষ করে ডিম ও দুধ) কেক অনেক বেশি ফ্লাফি ও সমান বেক হয়।


ধাপে ধাপে পদ্ধতি — ইলেকট্রিক রাইস কুকারে কেক বানানোর উপায়

১) রাইস কুকার প্রি-প্রস্তুতি — মনোযোগ দিন (৫–১০ মিনিট)

প্র্যাকটিক্যাল ব্যাখ্যা: কুকারের বাটিটা হালকা তেল বা মাখন দিয়ে ব্রাশ করুন — কেক আটকে গেলে তা ভাঙা ও দাগ দেখাতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্রাশ না থাকলে একটি টিস্যু বা কাগজে মাখন নিয়ে পুরো বাটিটা ঘষে নিই।
মানবিক টিপ: এই ছোট কাজটা আমাকে সবসময় মনে করায় — “ধীরে ধীরে শুরু করো, প্যানিক করলে ক্ষতি হবে।”
সতর্কতা: কুকারের ভিতর যদি পুরোনো চালের দাগ বা তেলরেশ থাকে, ভালোভাবে পরিষ্কার করে তারপর ব্যবহার করুন, নইলে কেকের সুগন্ধ খারাপ হতে পারে।


২) শুকনা উপকরণ মিশানো — ভালোমতো সিফ্ট করুন (৫ মিনিট)

বিস্তারিত: একটি বড় বাটিতে ময়দা, চিনি, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা ও লবণ সিফ্ট করে নিন। সিফ্ট করলে আয়রো-এয়ার ওঠে, ফলে কেক লাইট হয়।
মানবিক টিপ: যখন আমি সিফ্ট করি, মনে হয় কেকটা ইতিমধ্যেই হালকা ও আমার জন্য অপেক্ষা করছে — ছোট একটা ‘কিচেন রিয়ালিটি’ মোমেন্ট!
সতর্কতা: চিনি ও ময়দা সমানভাবে মিশতে হবে — নইলে কিছুকে জায়গায় মিষ্টি বেশি বা কম হতে পারে।


৩) ভেজা উপকরণ তৈরি — ডিম ফেটানো ও মিশানো (৩–৫ মিনিট)

বিস্তারিত: অন্য বাটিতে ডিম, দুধ, তেল এবং ভ্যানিলা এসেন্স নিয়ে ফেটান যতক্ষণ না মিশ্রণটি হালকা ফেনা হয়। হ্যান্ড মিক্সার বা ফোয়া দিয়ে ২–৩ মিনিট দানা করে নিলে ভালো।
মানবিক টিপ: আমি প্রায়শই এখানে এক চামচ চাটনি চিন্তা করে দেখি — “এবারই চেষ্টা” — ডিম ফেটানোর সময় একটু গান শুনলে কাজ আনন্দদায়ক হয়!
সতর্কতা: ডিম অতিমাত্রায় ফেটালে বুদবুদ বেশি হবে; তবে আধা-ফেটানো পর্যায়েই চলে — লক্ষ্য হালকা ফোমি টেক্সচার।


৪) ব্যাটার তৈরি — ধীরে ধীরে একত্রিত করা (৩–৪ মিনিট)

বিস্তারিত: ভেজা মিশ্রণ ধীরে ধীরে শুকনা উপকরণের মধ্যে ঢালুন এবং কাঁচা অংশ সরলভাবে মিশিয়ে নিন। বেশি নাড়বেন না — ২০–৩০ সেকেন্ডের বেশি নয়। ব্যাটারটি মসৃণ হওয়া উচিত, কিন্তু একটু ঘনত্ব থাকা ঠিক আছে।
মানবিক টিপ: এই ধাপটা আমার সবচেয়ে ধীর ও ধৈর্যের পরীক্ষার মতো — একবার আমার আগ্রহ বাড়লে আমি সবই বেশি নাড়িয়ে ফেলেছি এবং ফলাফল খারাপ হয়েছে — তাই আপনি শান্ত থাকুন।
সতর্কতা: বেশি নেড়ে ফেললে গ্লুটেন বেশি তৈরি হবে—কেকটি ডেনস হয়ে যাবে।


৫) ব্যাটার রাইস কুকারে ঢালুন ও লেভেল করা (২ মিনিট)

বিস্তারিত: ব্যাটার কুকারের বাটিতে ঢেলে ফাঁকগুলো কাঁটু দিয়ে বাতাস বের করে নিন বা বাটির তলার ছুড়ে ছেড়ে হালকা টেপ দিন — এতে বুদবুদ বের হবে এবং কেক সমানভাবে উঠবে। ঢাকনা ভালোভাবে বন্ধ করুন।
মানবিক টিপ: এই মুহূর্তে আমি সবসময় কল্পনা করি — “এখনই এটি ফ্লাফি হয়ে উঠবে” — এটা কাজে ডুপ্লিকেট আনন্দ দেয়।
সতর্কতা: ঢাকনার কাছে জল বা ভেজা কিছু রাখবেন না — স্টিম আসার কারণে কেক আর্দ্র হতে পারে।


৬) কুক মোড চালু করা ও বেকিং টাইম — ধৈর্য ধরুন (৪০–৫০ মিনিট)

বিস্তারিত: কুকারে “Cook” মোড অন করুন। কেক সাধারণত ৪০–৫০ মিনিটে প্রস্তুত হবে; তবে ৩০–৩৫ মিনিট পরে টুথপিক দিয়ে চেক করতে পারেন। টুথপিক পরিষ্কার বের হলে কেক তৈরি।
মানবিক টিপ: বেকিং সময়টা আমার জন্য একটি অবসর মুহূর্ত — কিচেনে কাপ চা নিয়ে বসে থাকি; স্টোভে ঝাঁট না দিয়ে শান্ত থাকাই সেরা।
সতর্কতা: ঢাকনা বারবার খুলবেন না — এতে তাপ কমে যায় এবং কেক বসে যেতে পারে।


৭) কেক আউট, কুলিং ও সাজানো (১০–২০ মিনিট)

বিস্তারিত: কুকার অফ করে ৮–১০ মিনিট ঢাকনা বন্ধ রেখে ঠান্ডা হতে দিন। তারপর স্প্যাচুলার সাহায্যে ধীরে ধীরে কেকটা বের করুন। পুরোপুরি ঠান্ডা হলে ক্রিম বা চকলেট দিয়ে সাজান।
মানবিক টিপ: প্রথম কাটা আমি সবসময় ভাই/মা বা ছোটদের হাতে দিয়ে আনন্দ ভাগ করে নিই — সেই মুহূর্তটাই সবচেয়ে পুরস্কার।
সতর্কতা: কেক যখন গরম, তখন সরাসরি কেটে ফেললে ভেতরের স্ট্রাকচার নষ্ট হতে পারে — ঠান্ডা হলে কাটা ভালো।


অতিরিক্ত টিপস ও ট্রিকস

  •  ডিম রুম টেম্পারেচারে রাখুন — ফ্লাফি টেক্সচারের জন্য অপরিহার্য।
  •  ব্যাটার বেশি ঘন হলে ১–২ টেবিল চামচ দুধ দিন।
  •  মাখন ব্যবহার করলে স্বাদ বেশি মোলায়েম হয়; তেল দিলে কেক আর্দ্র ও নরম থাকবে।
  •  চকলেট কেক করতে ময়দার ১০% কোকো পাউডার দিয়ে বদলে নিন।


⚠️ সাধারণ ভুল ও কীভাবে এড়িয়ে চলবেন

  •  ব্যাটার বেশি নেড়ে ফেলা → কেক ডেনস।
  •  ঢাকনা বারবার খোলা → কেক বসে যাবে।
  •  ঠান্ডা অবস্থায় কেটে ফেলা → কেক ভেঙে যাবে।
  •  কুকার সেটিং ভুলে রাখা → অতিরিক্ত বেক হয়ে পউচে যাবে।

সংরক্ষণ ও পরিবেশন 

  •  ব্যাটার বেশি নেড়ে ফেলা → কেক ডেনস।
  •  ঢাকনা বারবার খোলা → কেক বসে যাবে।
  •  ঠান্ডা অবস্থায় কেটে ফেলা → কেক ভেঙে যাবে।
  •  কুকার সেটিং ভুলে রাখা → অতিরিক্ত বেক হয়ে পউচে যাবে।

পুষ্টি তথ্য (প্রতিটি স্লাইস — আনুমানিক)

  •  ক্যালোরি: ≈ ২৪০ kcal
  •  কার্বোহাইড্রেট: ≈ ৩৫ গ
  •  প্রোটিন: ≈ ৪ গ
  •  ফ্যাট: ≈ ১০ গ

(এই মানগুলো আনুমানিক — উপকরণ ও পরিমাপে পরিবর্তন হতে পারে।)


আরও কেক রেসিপি পড়ুন

  1. রেড ভেলভেট কেক রেসিপি 
  2. ভ্যানিলা কেক রেসিপি | সহজে ঘরে তৈরি করুন ভ্যানিলা কেক 
  3. জন্মদিনের কেক সাজানোর আইডিয়া - Jonmodiner Cake Sajano Idea .

❓ প্রায়শই জিজ্ঞাস্য (FAQs)



  1.  ওভেন ছাড়া কি কেক ঠিকমতো হবে? — হ্যাঁ, রাইস কুকারে ভালো কেক হয় যদি পদ্ধতি ঠিকমতো অনুসরণ করেন।
  2.  কোন রাইস কুকার ভালো? — নরম কুকার বেটার, তবে যেকোনো স্ট্যান্ডার্ড ইলেকট্রিক রাইস কুকারেই করা যায়।
  3.  কেক কেন মাঝখানে ভাঁজ পড়ে? — সাধারণত ব্যাটার বেশি মিশানো বা ফুলা হওয়ার আগে ঢাকনা খুললে।
  4.  তেল না মাখন — কোনটা ভালো? — তেল আর্দ্রতা রাখে; মাখন স্বাদ বাড়ায়।
  5.  চকলেট টপিং কিভাবে করে? — গলানো চকলেট কেকের ওপর ঢেলে ৫–১০ মিনিট সেট হতে দিন।
  6.  কোন দুধ ব্যবহার করব? — সাধারণ পাস্তুরাইজড পূর্ণ-দেশীয় দুধ ভালো।
  7.  সাবধানে ব্যাটার কতটা রাখতে হবে? — কুকারের ২/৩ এর বেশি না—উদ্ভব হলে ওভারফ্লো হতে পারে।
  8.  বেকিং পাউডার পুরানো হলে? — টেস্ট করতে ১ চা চামচ বেকিং পাউডারে কয়েক ফোঁটা অ্যাসিড (ভিনেগার) দিলে ফেনা আসবে; না হলে বদলে নিন।

 


আমার শেষ কথা 

প্রথমবার সফল না হলে হতাশ হবেন না — আমি নিজে প্রথমবারে কেকটা কিছু অংশে ভাঙিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিটি চেষ্টা শেখায় — আজ আপনি শিখেছেন কিভাবে রাইস কুকারে Cake Recipe করবেন। আজই চেষ্টা করুন, পরিবারের কারো জন্য বানিয়ে দেখান, এবং ফলাফল শেয়ার করতে ভুলবেন না — আপনার ছোট আনন্দগুলোই বড় স্মৃতি গড়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন