![]() |
| কলার কেক রেসিপি |
তাজা কেকের গন্ধ যখন রান্নাঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন যেন মনে হয় ছোটবেলার সেই মায়ের হাতের রান্নাঘরে ফিরে গেছি। কলার কেক আমার অন্যতম প্রিয় রেসিপি, কারণ এতে একসঙ্গে থাকে ফলের মিষ্টি ঘ্রাণ, কোমল টেক্সচার আর ঘরোয়া ভালোবাসার ছোঁয়া।
অনেকেই ভাবে কেক বানানো মানে ওভেন, মিক্সার আর ঝামেলা — কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই কলার কেক রেসিপি এতটাই সহজ যে আপনি চাইলে চুলায়ও বানাতে পারবেন!
চলুন আজ আমি আপনাকে দেখাই কিভাবে মাত্র কিছু সাধারণ উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় একদম সফট ও মজাদার কলার কেক।
⏱️ মোট সময়: ১ ঘন্টা
🎯 জটিলতা: সহজ
👩🍳 উপযুক্ত: নতুন বা ঘরোয়া বেকারদের জন্য
কলার কেক রেসিপির সারসংক্ষেপ
| ফিচার | বিস্তারিত |
|---|---|
| 🍰 রেসিপির নাম | কলার কেক (Banana Cake) |
| ⏱️ প্রস্তুতির সময় | ২০ মিনিট |
| 🔥 রান্নার সময় | ৪০ মিনিট |
| 🍽️ পরিবেশন | ৬–৮ জনের জন্য |
| 🎯 জটিলতা | সহজ |
| 💡 দ্রুত টিপস | কলা যত পাকা হবে, কেক তত সুগন্ধি ও নরম হবে! |
উপকরণসমূহ
- ১ কাপ ময়দা
- ১ কাপ চিনি গুঁড়া
- ২ টি ডিম
- ১ টি পাকা কলা (ভালভাবে গ্রেট করা)
- ৩ চা চামচ চালকুমরার মুরব্বা কুচি (ঐচ্ছিক)
- চিমটি লবণ
- ১ চা চামচ বেকিং পাউডার
- চিমটি বেকিং সোডা
- ১ টেবিল চামচ তেল
- ২ চা চামচ দুধ গুঁড়া
- ১ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স
প্রো টিপ: কলা যদি একদম নরম হয় তবে কেক আরও মসৃণ ও স্পঞ্জি হয়।
ধাপে ধাপে প্রস্তুত প্রণালী
1️⃣ ডিম ও চিনি মেশানো
প্রথমে একটি বড় বাটিতে ডিম ও চিনি একসাথে ভালোভাবে ফেটাতে হবে যতক্ষণ না তা ফেনার মতো হালকা হয়। এটি কেকের ফ্লাফিনেস বাড়ায়।
2️⃣ শুকনো উপকরণ মেশানো
অন্য একটি পাত্রে ময়দা, লবণ, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা, দুধ গুঁড়া একসাথে চালুনিতে ছেঁকে নিন। এতে ময়দার দলা ভাঙবে ও কেক হবে হালকা।
3️⃣ ভেজা উপকরণ যোগ
ডিম-চিনির মিশ্রণে এবার তেল, গ্রেট করা কলা ও ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে নেড়ে নিন। তারপর আস্তে আস্তে শুকনো উপকরণগুলো মেশান।
টিপস: এখানে অতিরিক্ত নেড়েচেড়ে ফেলবেন না — তাতে কেক শক্ত হয়ে যায়।
4️⃣ কেক পাত্র তৈরি
যে বাটিতে কেক বসাবেন, সেখানে হালকা তেল মেখে বেকিং পেপার বিছিয়ে দিন এবং আবার সামান্য তেল লাগান। এতে কেক আটকে যাবে না।
5️⃣ কেক বেক বা চুলায় রান্না
চুলায় হালকা আঁচে ঢাকনা দিয়ে ৪০ মিনিট রাখুন।
(ওভেন ব্যবহার করলে ১৮০° সেলসিয়াসে ৩৫–৪০ মিনিট বেক করুন।)
6️⃣ পরীক্ষা করুন
কেকের গন্ধ এলে টুথপিক ঢুকিয়ে দেখুন — যদি পরিষ্কার বের হয়, বুঝবেন কেক হয়ে গেছে।
7️⃣ ঠান্ডা করা ও পরিবেশন
কেক ঠান্ডা হলে বাটির চারপাশে ছুরি চালিয়ে উল্টে দিন। কেকটি একেবারে নরম ও সুন্দরভাবে বের হবে।
টিপস ও ট্রিকস (Tips & Tricks):
- কলা যত বেশি পাকা হবে, কেক তত বেশি সুগন্ধি হবে।
- উপকরণ সব সময় রুম টেম্পারেচারে রাখুন।
- অতিরিক্ত মেশাবেন না – এতে কেক শক্ত হয়।
- চুলার ঢাকনা রান্নার মাঝপথে তুলবেন না।
- ইচ্ছে করলে সামান্য দারচিনি বা বাদাম কুচি দিতে পারেন অতিরিক্ত ফ্লেভারের জন্য।
⚠️ সাধারণ ভুল ও তা এড়ানোর উপায়
- ঠান্ডা ডিম বা দুধ ব্যবহার করা
- বেকিং পাউডার পুরোনো হওয়া
- চুলা আগে থেকে গরম না করা
- অতিরিক্ত সময় রান্না করা (কেক শুকিয়ে যাবে)
- ঢাকনা বারবার খুলে দেখা
সংরক্ষণ ও পরিবেশন আইডিয়া
- বাকি কেক এয়ারটাইট কনটেইনারে রাখলে ৩ দিন ভালো থাকে।
- ফ্রিজে রাখলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত রাখা যায়।
- গরম কেকের সাথে আইসক্রিম, চকলেট সিরাপ বা মধু পরিবেশন করলে স্বাদ দ্বিগুণ হয়!
পুষ্টিগুণ (Nutrition Info – প্রতি পিসে আনুমানিক):
| উপাদান | পরিমাণ |
|---|---|
| ক্যালরি | ২৪০ kcal |
| কার্বোহাইড্রেট | ৩৫g |
| প্রোটিন | ৪g |
| ফ্যাট | ১০g |
আমার নিজের অভিজ্ঞতা
প্রথমবার যখন আমি কলার কেক বানাতে গিয়েছিলাম, ওভেন ছিল না — তাই চুলায়ই বানাই। প্রথমবার কেক একটু পোড়া গন্ধ হয়েছিল, কারণ আঁচটা বেশি ছিল।
কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন ধৈর্য ধরে হালকা আঁচে রান্না করলাম, কেকটা এমন নরম হয়েছিল যে সবাই বিশ্বাসই করতে পারেনি ওভেন ছাড়াই বানানো!
তাই বলব — ভুল হলেও হাল ছাড়বেন না। কেক বানানো শেখার মজা আছে, আর এই কলার কেক রেসিপি সত্যিই আপনাকে খুশি করবে।
❓ প্রশ্নোত্তর (FAQs):
Q1: ওভেন ছাড়া কি কলার কেক বানানো সম্ভব?
👉 হ্যাঁ, চুলায় বা রাইস কুকারেও দারুনভাবে বানানো যায়।
Q2: তেল বদলে কি মাখন ব্যবহার করা যাবে?
👉 অবশ্যই! মাখন দিলে কেক আরও ফ্লাফি হয়, তবে তেল দিলে বেশি নরম হয়।
Q3: কেক বসে যাওয়ার কারণ কী?
👉 সাধারণত বেশি নাড়াচাড়া বা রান্নার মাঝপথে ঢাকনা খোলা হলে এমন হয়।
Q4: দুধ গুঁড়ার বদলে তরল দুধ দেওয়া যাবে?
👉 হ্যাঁ, তবে খেয়াল রাখবেন তরল হলে ব্যাটার একটু ঘন করে নিতে হবে।
Q5: শিশুদের জন্য এই কেক উপযুক্ত কি?
👉 হ্যাঁ, সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপাদানে তৈরি হওয়ায় এটি শিশুদের জন্য নিরাপদ।
সম্পর্কিত রেসিপি লিংক
- স্ট্রবেরি কেক রেসিপি | Strawberry Cake recipe
- ইলেকট্রিক রাইস কুকারে কেক বানানোর উপায়
- রেড ভেলভেট কেক রেসিপি | Red velvet cake recipe
কলার কেকের উপকারিতা
কলার কেক শুধু সুস্বাদু একটি খাবার নয়, এটি শরীরের জন্যও অনেক উপকারী। কলায় প্রাকৃতিক চিনি ও ফাইবার থাকার কারণে এটি শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায় এবং হজমে সাহায্য করে।
সকালে নাস্তা বা বিকেলের নাশতায় এক টুকরো কলার কেক খেলে শরীর সতেজ ও সক্রিয় থাকে। কলায় থাকা পটাসিয়াম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এছাড়াও কলায় ট্রিপটোফ্যান নামের একটি উপাদান থাকে যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে ও মানসিক চাপ কমায়। ডিম ও দুধ দিয়ে তৈরি হওয়ায় কলার কেক থেকে প্রোটিন, ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
নরম ও সহজপাচ্য হওয়ায় এটি শিশু ও বয়স্ক উভয়ের জন্যই উপযুক্ত। আরও একটি বড় সুবিধা হলো, কলার প্রাকৃতিক মিষ্টতার কারণে এতে বেশি চিনি ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না, তাই এটি তুলনামূলকভাবে হেলদি।
তাই বলা যায়, কলার কেক কেবল মজাদারই নয়, এটি শক্তি, পুষ্টি ও ভালো মুডের এক অপূর্ব মিশ্রণ — যা প্রতিদিনের জীবনে আনন্দ ও শক্তি এনে দেয়।
উপসংহার
এখন আপনার পালা!
এক কাপ চা বা কফির সাথে নিজের হাতে বানানো নরম, মজাদার কলার কেক খাওয়ার আনন্দই আলাদা।
তাই আজই রান্নাঘরে ঢুকে পড়ুন, আর এই সহজ রেসিপি ট্রাই করুন।
যদি রেসিপিটি ভালো লাগে —
👉 আপনার প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করুন
👉 বা ব্লগে বুকমার্ক করে রাখুন পরেরবারের জন্য।
মনে রাখবেন: প্রতিটি সফল কেকের পেছনে থাকে এক চিমটি ভালোবাসা আর একটু ধৈর্য।
