সুজি কেক রেসিপি | Suji Cake Recipe in Bangla

 

সুজি কেক রেসিপি
সুজি কেক রেসিপি

আমি যখন প্রথম সুজি কেক বানিয়েছিলাম, তখন আমার হাত একেবারেই কেক বানানোর কাজে পাকা ছিল না। মা বলেছিলেন, “কেক মানে শুধু ময়দা আর ডিম নয়, মনের ভালবাসাও মেশাতে হয়।”
সেই দিনটা ছিল একটা বৃষ্টিভেজা বিকেল — ঘরে গরম দুধের গন্ধ, সুজির হালকা ভাজা সুবাস, আর কড়াইতে ধীরে ধীরে ফুলে ওঠা কেক। এখনো সেই গন্ধটা মনে পড়লে মন ভরে যায়।

এই সুজি কেক রেসিপি আসলে তাদের জন্য যাদের কাছে ওভেন নেই, কিন্তু ঘরেই বানাতে চান নরম, ফ্লাফি ও সুস্বাদু কেক। আর হ্যাঁ, এতে দুধ, ইনো বা বেকিং পাউডার—যেটাই থাকুক না কেন, ফলাফল হবে একদম পারফেক্ট।


সুজি কেক রেসিপি সারসংক্ষেপ

ফিচারবিবরণ
🍰 রেসিপির নামসুজি কেক
🍳 রান্নার ধরণমিষ্টান্ন / ডেজার্ট
⏱️ প্রস্তুতির সময়১৫ মিনিট
🔥 রান্নার সময়৩০–৪০ মিনিট
🍽️ পরিবেশন৪ জনের জন্য
🎯 কঠিনতাএকদম সহজ
💡 দ্রুত টিপদুধটা হালকা গরম হলে কেক আরও নরম হবে!

সুজি কেক রেসিপির উপকরণ 

  1. ১ প্যাকেট সুজি
  2. ২৫০ গ্রাম ময়দা
  3. ১ কাপ দুধ (গরুর দুধ বা প্যাকেট দুধ, উষ্ণ গরম)
  4. ½ কাপ সয়াবিন তেল
  5. ১ কাপ চিনি (পরিমাণ নিজের মতো করে কমানো/বাড়ানো যায়)
  6. ১ চা চামচ বেকিং পাউডার বা ইনো
  7. ১ চিমটি লবণ
  8. ১ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স (ঐচ্ছিক)
  9. কিসমিস, চেরি, ফল, কাজু — সাজানোর জন্য (ইচ্ছেমতো)

প্রো টিপ: সুজিটা আগে হালকা করে ভেজে নিলে কেকের গন্ধ ও টেক্সচার অনেক সুন্দর হয়।


সুজি কেক রেসিপির ধাপে ধাপে নির্দেশনা 

ধাপ ১: সুজি ভাজা

প্রথমে একটা কড়াইতে অল্প তেল দিয়ে সুজিটা হালকা করে ভেজে নিন। এতে একটা দারুণ বাদামি ঘ্রাণ আসবে। সাবধান — পুড়ে না যায় যেন।

ধাপ ২: মিশ্রণ তৈরি

এবার একটি বড় বাটিতে ময়দা, ভাজা সুজি, বেকিং পাউডার (বা ইনো) এবং চিনি একসাথে মেশান। ধীরে ধীরে উষ্ণ দুধ ও তেল যোগ করুন।
সব মিশিয়ে একটা মোলায়েম ব্যাটার তৈরি করুন। (একদম ঘনও না, আবার বেশি পাতলাও না।)

ধাপ ৩: ব্যাটার বিশ্রাম

এবার ব্যাটারটা ১০–১৫ মিনিট ঢেকে রেখে দিন। এতে সুজি ফুলে উঠবে আর কেকটা আরও নরম হবে।

ধাপ ৪: কেক বানানোর প্রস্তুতি

ওভেন না থাকলে চিন্তা নেই। আপনি চাইলে গ্যাসের চুলা বা মাটির চুলাতেও করতে পারেন।
একটা কড়াই বা পাত্রে একটা কাগজ বা ঘি লাগানো কেক পেপার বিছিয়ে দিন, তারপর ব্যাটার ঢেলে দিন।

ধাপ ৫: রান্না

চুলায় ঢাকনা দিয়ে ৩০–৪০ মিনিট কম আঁচে রান্না করুন। মাঝে মাঝে টুথপিক ঢুকিয়ে দেখুন — যদি পরিষ্কার বের হয়, বুঝবেন কেক তৈরি।

ধাপ ৬: ঠান্ডা করা ও সাজানো

কেক হয়ে গেলে একটু ঠান্ডা হতে দিন। তারপর কিসমিস, চেরি বা কাজু দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
বিশ্বাস করুন, সেই গন্ধে পুরো ঘর ভরে যাবে!


টিপস ও ট্রিকস 

  •  দুধ সবসময় গরম বা উষ্ণ ব্যবহার করুন, ঠান্ডা হলে কেক শক্ত হয়ে যায়।
  •  ইনো দিলে ব্যাটারটা ঢাকতে ভুলবেন না।
  •  ব্যাটার বেশি ঘন হলে অল্প দুধ দিন, পাতলা হলে একটু সুজি যোগ করুন।
  •  চাইলে কয়েক ফোঁটা লেবুর খোসা কুঁচি দিয়ে দিন, স্বাদ দ্বিগুণ হবে।

⚠️ সাধারণ ভুলগুলো 

  • বেশি মিশিয়ে ফেললে কেক শক্ত হয়ে যায়।
  • আঁচ বেশি দিলে নিচটা পুড়ে যাবে।
  • ওভেন হোক বা চুলা, ঢাকনা খুলে বারবার না দেখাই ভালো — এতে কেক ফুলে ওঠে না।
  • সুজি ভাজা বাদ দিলে কেকের গন্ধ ভালো হবে না।

সংরক্ষণ পরামর্শ

এই সুজি কেক ঘরের তাপমাত্রায় ২ দিন ভালো থাকে।
রেফ্রিজারেটরে রাখলে ৫–৭ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
পরিবেশনের আগে হালকা গরম করে নিলে আবারও নরম ও তাজা লাগবে।


পুষ্টিগুণ (প্রতি স্লাইস):

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
ক্যালরি২২০ ক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট৩২ গ্রাম
প্রোটিন৫ গ্রাম
ফ্যাট৯ গ্রাম

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

আমি প্রথম যখন এই সুজি কেক বানিয়েছিলাম, তখন দুইবার ব্যর্থ হয়েছিলাম।
একবার দুধ ঠান্ডা ছিল, আরেকবার ইনো দেওয়ার পর ব্যাটার ফ্রিজে রেখেছিলাম। কিন্তু তৃতীয়বার যখন সব ঠিকঠাক করলাম — আহ! কেকটা এমন নরম, এমন সুগন্ধি হলো যে সবাই অবাক হয়ে গেল।

আমি এখন প্রায়ই এই রেসিপিটা বানাই, বিশেষ করে বিকেলের চায়ের সাথে।
বিশ্বাস করুন, এই ঘরে তৈরি সুজি কেক একবার খেলেই আপনি দোকানের কেক ভুলে যাবেন। 


আমার বাচ্চাদের কেন আমি সুজি কেক খেতে দেই

আমি সবসময় চেষ্টা করি, বাচ্চাদের জন্য এমন কিছু বানাতে যাতে স্বাদ যেমন থাকে, তেমনি পুষ্টিও মেলে। দোকানের কেকগুলো দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন, আমি জানি তাতে কত রকম কেমিক্যাল, রং আর প্রিজারভেটিভ থাকে। তাই আমি ভাবলাম — কেন না নিজের হাতে কিছু বানাই, যা হবে নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর আর ভালোবাসা মেশানো

সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয় আমার সুজি কেক রেসিপির গল্প
সুজি তো এমনিতেই হালকা, সহজপাচ্য আর বাচ্চাদের জন্য একদম পারফেক্ট। যখন আমি এই কেকটা বানাই, আমার বাচ্চারা রান্নাঘরে এসে দাঁড়িয়ে যায় — “মা, কখন হবে? গন্ধটা কত সুন্দর!”
তাদের চোখে সেই আগ্রহ, মুখে হাসি — এই অনুভূতিটা আসলে কোনো দোকানের কেক দিয়ে পাওয়া যায় না।

আমি জানি, এই কেকের প্রতিটা কামড়ে আছে মায়ের ভালোবাসা।
চিনি, দুধ, সুজি, সবকিছু একসাথে যখন কড়াইতে মিশে যায়, তখন শুধু একটা কেক নয় — তৈরি হয় একটা স্মৃতি
যা আমার বাচ্চারা বড় হয়ে হয়তো বলবে,
“আমার মা এমন একটা কেক বানাতো, যেটার গন্ধ এখনো ভুলতে পারি না।” 


প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs):

Q1: ওভেন ছাড়া কি এই কেক বানানো যায়?
👉 হ্যাঁ, গ্যাসের চুলা, প্রেসার কুকার বা মাটির চুলায় সহজেই করা যায়।

Q2: ইনো না থাকলে কি হবে?
👉 ইনোর পরিবর্তে বেকিং পাউডার বা অল্প বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন।

Q3: ডিম ছাড়া কি বানানো যাবে?
👉 অবশ্যই! এই রেসিপিতে ডিমের দরকার নেই।

Q4: দুধের পরিবর্তে কি পানি ব্যবহার করা যাবে?
👉 না, দুধই কেকের নরম ভাব আনে, তাই দুধই ভালো।

Q5: কেকের ওপর ফল বা বাদাম দেব কি আগে না পরে?
👉 চাইলে আগে ব্যাটারে মিশিয়ে দিতে পারেন, বা রান্না শেষে ওপরেও সাজাতে পারেন।


শেষ কথা 

এখন আপনার পালা! 
একটা কড়াই, একটু সুজি আর অনেকটা ভালোবাসা নিয়ে তৈরি করে ফেলুন আপনার নিজের হাতে বানানো সুজি কেক
পরিবার বা প্রিয়জনের জন্য বানান — দেখবেন তাদের হাসিতে আপনার পরিশ্রম সার্থক হয়ে যাবে।

এই রেসিপিটা বুকমার্ক করে রাখুন, আর আপনার বানানো কেকের অভিজ্ঞতা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না! 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন